পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে?
আগের তুলনায় বর্তমানে পাসপোর্ট নবায়ন করা অনেক সহজ হয়েছে। অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা থাকায়, আপনাকে আর ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হবে না। তবে, আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি। তাই আপনারা অনেকেই জানতে চান যে, পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে। আর উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করার জন্যই আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে?
আমরা সবাই জানি, বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য ডকুমেন্টস। পুরনো পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে রিনিউ করতে হয়, যাকে “পাসপোর্ট নবায়ন” বলা হয়। তবে অনেকেই মনে করেন এই প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আজকের আলোচনায় আমরা পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে তার তালিকা প্রদান করবো।
০১-অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন ফরম
অনলাইনে আবেদন করার পর, আপনাকে একটি Summary পেজ প্রিন্ট করে রাখতে হবে। এই পেজে আপনার আবেদনকৃত সকল ধরনের তথ্য থাকবে। যদি আপনি নাম পরিবর্তন, পেশা পরিবর্তন, ঠিকানা পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য আবেদন করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ফরম বা আবেদনপত্র এর প্রিন্ট কপি জমা দিতে হবে।
এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, রেজিস্ট্রেশন ফরম বা আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। যেমন, সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য NOC (No Objection Certificate), ছাত্রদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে NOC ইত্যাদি।
০২-জাতীয় পরিচয়পত্র/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ হল পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক কাগজপত্র। এনআইডি/জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপি এবং ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
০৩-পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য
আগের দিন গুলোতে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য সম্বলিত পেজের ফটোকপি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বর্তমানে, এটি আর প্রয়োজন নেই। কারণ, বর্তমান সময়ে আবেদনকারীর NID এবং মূল পাসপোর্ট জমা দিলেই যথেষ্ট। তবে, যদি আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য পেজের ফটোকপি থাকলে তার মাধ্যমে দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
মনে রাখবেন, যদি আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট টি ১০ বছরের মেয়াদের নিয়মিত পাসপোর্ট হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই পাসপোর্টের তথ্য সম্বলিত পেজের ফটোকপি জমা দিতে হবে। কিন্তুু আপনার আগের পাসপোর্টটি যদি MRP হয়, তাহলেও আপনাকে তথ্য সম্বলিত পেজের ফটোকপি জমা দিতে হবে। আর ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে, আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য ইতিমধ্যেই ডিজিটাল আকারে সংরক্ষিত থাকে। তাই, এক্ষেত্রে আপনার কোনো ধরনের ফটোকপির প্রয়োজন হবেনা।
০৪-পাসপোর্ট ফি প্রদানের রশিদ
পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য নির্ধারিত ফি রয়েছে, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। এই ফি এর পরিমাণ নির্ভর করে আপনার আবেদনের ধরণ এবং কত দ্রুত পাসপোর্ট পেতে চান তার উপর। আপনি পাসপোর্ট নবায়নের ফি নিকটতম সরকারি ব্যাংক থেকে প্রদান করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি পোস্ট অফিস থেকেও আপনার পাসপোর্ট ফি প্রদানের জন্য মানি অর্ডার কিনতে পারবেন।
তবে আপনি যদি ব্যাংক সার্টিফাইড চেক ব্যবহার করতে চান, তাহলে সেটি অবশ্যই নির্ধারিত ব্যাংকের চেক হতে হবে। আর বর্তমান সময়ে bKash, Rocket, SureCash, Upay, Nagad এর মতো ই-পে মাধ্যমেও ফি প্রদান করা যায়। তবে এই অনলাইন মাধ্যমে পেমেন্ট করলে আপনার কোনো ধরনের ফি প্রদানের রশিদ দরকার হবেনা।
০৫-পেশা প্রমানের ডকুমেন্টস
বাংলাদেশী পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই তাঁর পেশা প্রমাণের কিছু নথিপত্র জমা দিতে হবে। এই নথিপত্র গুলো আবেদনকারীর পেশাগত পরিচয় যাচাই করতে এবং তাঁর আর্থিক সচ্ছলতা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষের ভিন্ন ডকুমেন্টস দরকার হতে পারে। যেমন,
- চাকরির প্রশংসাপত্র: বর্তমান কর্মস্থান থেকে একটি স্বাক্ষরিত ও স্ট্যাম্পযুক্ত চাকরির প্রশংসাপত্র দিতে হবে। যাতে আবেদনকারীর পদবী, যোগদানের তারিখ এবং বেতন উল্লেখ থাকে।
- ব্যবসায়িক সনদ: নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত কপি দিতে হবে।
- পেশাগত সদস্যপত্র: আবেদনকারীর যদি কোন পেশাগত সংগঠনের সদস্যপদ থাকে, তবে সেই সংগঠনের সদস্য পত্রের সত্যায়িত কপি দিতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: উচ্চ মাধ্যমিক বা তার সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত কপি।
- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য: পেনশন সনদের সত্যায়িত কপি।
০৬-সরকারি চাকুরিজীবীদের GO or NOC
বাংলাদেশের সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে GO (Good Offices) নাকি NOC (No Objection Certificate) প্রয়োজন, এ নিয়ে প্রায়শই বিভ্রান্তি দেখা যায়। GO হল “Good Offices” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র যা একজন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণের জন্য দেওয়া হয়। GO ইস্যু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
অপরদিকে NOC হল “No Objection Certificate” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটিও একটি আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র যা একজন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণের জন্য দেওয়া হয়। NOC ইস্যু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
সরকারি চাকুরিজীবীদের পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে GO প্রয়োজন। তবে, যদি কর্মকর্তা সরকারি ছুটি ছাড়া অন্য কোন কারণে (যেমন ব্যক্তিগত ভ্রমণ, ব্যবসায়িক ভ্রমণ) বিদেশ ভ্রমণ করতে চান, তাহলে তাদের NOC নিতে হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জানলাম। তো একটি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে আবেদন করতে হয় না, বরং পুরনো পাসপোর্ট রিনিউ করতে হয়। তাই অনেকেই জানতে চান, পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত খরচ হয়। তো আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ এবং পাতার সংখ্যার উপর নির্ভর করে রিনিউ ফি নির্ধারিত হবে। যেমন,
৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট রিনিউ ফি
- ৪৮ পাতা: ৪,০২৫ টাকা
- ৬৪ পাতা: ৬,৩২৫ টাকা
১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট রিনিউ ফি
- ৪৮ পাতা: ৫,৭৫০ টাকা
- ৬৪ পাতা: ৮,০৫০ টাকা
তবে এই পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি সর্বদা এক রকম থাকেনা। তাই পরবর্তী সময়ে যদি বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ ফি বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা অবশ্যই এই আর্টিকেলে যুক্ত করে দেওয়া হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে- সে সম্পর্কে আপনার আরো অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। তার মধ্যে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিচে দেওয়া হলো। যেন আপনার পাসপোর্ট রিনিউ সম্পর্কে কোনো কিছু অজানা না থাকে।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে জরিমানা কত?
আগের দিন গুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে হলে নির্ধারিত ফি ছাড়াও প্রতিটি বছরের জন্য জরিমানা দিতে হতো। তবে সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ বছর সংখ্যার উপর নির্ভর করে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত করার নিয়ম ছিলো। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট এবং ২০২০ সালে রি-ইস্যু করতে হলে ৬৯০ টাকা জরিমানা দিতে হতো।
তবে সরকারের সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্তে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য জরিমানা সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। এখন আপনি যদি মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে চান, তাহলে কেবলমাত্র নির্ধারিত পাসপোর্ট ফি দিলেই হবে।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে কি দেখা যায়?
পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়েছে কিনা তা চেক করা খুবই সহজ! আপনার পাসপোর্ট বইয়ের ডেটা পৃষ্ঠা বা কার্ডের সামনের দিকে তাকান। ব্যক্তিগত তথ্যের নিচে ইস্যু করার তারিখ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। মূলত এখান থেকেই আপনি জানতে পারবেন যে, আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়েছে কিনা।
উপসংহার
পাসপোর্ট রিনিউ করা একটি সহজ প্রক্রিয়া। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে এবং নির্ধারিত নিয়ম মেনে চললে আপনি দ্রুত ও সহজেই আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব নয়। তাই নিয়মিতভাবে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ পরীক্ষা করে নিবেন এবং প্রয়োজনে রিনিউ করিয়ে নিবেন। আর এমন ধরনের অজানা বিষয় গুলো সহজ ভাষায় জানতে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
