ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
ট্রেড লাইসেন্স (Trade license) শুধু একটি ডকুমেন্টস নয়, এটি আপনার ব্যবসার বৈধতা এবং স্থায়িত্বের প্রতীক। যা আপনাকে আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করবে, কর কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে এবং বাজারে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা অবৈধ, তাই ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।
কিন্তুু আমরা অনেকেই জানিনা যে, ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে। আর আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্য অনেক হেল্পফুল হবে। কারন, আজকে আমি আপনাকে জানিয়ে দিবো ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে।
ট্রেড লাইসেন্স কি?
সহজ কথায় বলতে গেলে, ট্রেড লাইসেন্স হলো সরকারের কাছ থেকে পাওয়া একটি অনুমতিপত্র যা আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবসা পরিচালনা করার সম্মতি দিবে। এটি একটি আইনি নথি যা প্রমাণ করে যে আপনার ব্যবসা বৈধ এবং নিয়ন্ত্রিত।
ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে কি সমস্যা হয়?
বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা অবৈধ। অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা শুরু করেন, কিন্তু তাদের অজান্তেই তারা আইনি জটিলতা, আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি এবং ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েন। তাই চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে কি কি সমস্যা হতে পারে।
- সরকার কর্তৃপক্ষ আপনাকে জরিমানা করতে পারবে।
- কিছু ক্ষেত্রে কারাদণ্ড-এরও বিধান রয়েছে।
- কর্তৃপক্ষ আপনার ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে পারবে।
- ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বা ব্যবসায়িক লেনদেন করা কঠিন।
- ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
- এই লাইসেন্স ছাড়া আপনি সরকারি ঋণ, অনুদান, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবেন।
তবে ফুটপাথে বসে ফলমূল বিক্রি, রিকশা চালানো ইত্যাদির মতো ছোটখাটো ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়না। তবে, এই ধরনের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে স্থানীয় নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাই যদি আপনি এমন ধরনের ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে অবশ্যই স্থানীয় নিয়ম কানুন গুলো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
ছোট্ট দোকান থেকে শুরু করে বিশাল প্রতিষ্ঠান, সকলের জন্যই ট্রেড লাইসেন্স একটি অপরিহার্য অংশ। ট্রেড লাইসেন্স কেবল একটি ডকুমেন্টস নয়, বরং এটি আপনার ব্যবসার আইনি স্বীকৃতি। যা আপনাকে বাজারে প্রতিষ্ঠিত করতে, আস্থা অর্জন করতে এবং আইনি সুবিধা ভোগ করতে সাহায্য করে।
তবে, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে, আপনাকে অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। তাই বর্তমান সময়ে ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তালিকা তুলে ধরা হলো।
স্বত্বাধিকারী ব্যবসার জন্য
- অফিস/দোকানের ভাড়ার চুক্তিপত্র (সত্যায়িত)
- যদি নিজস্ব জায়গা হয় তাহলে ইউটিলিটি বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ (বাণিজ্যিক স্থাপনার জন্য)
- ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্র
অংশীদারী ব্যবসার জন্য
- অফিস/দোকানের ভাড়ার চুক্তিপত্র (সত্যায়িত)
- যদি নিজস্ব জায়গা হয় তাহলে ইউটিলিটি বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ
- ৩০০ টাকার দলিলে অংশীদারী চুক্তিপত্র
- ম্যানেজিং পার্টনারের ৩ কপি ছবি
- ম্যানেজিং পার্টনারের জাতীয় পরিচয়পত্র
কোম্পানির জন্য
- অফিস/দোকানের ভাড়ার চুক্তিপত্র (সত্যায়িত)
- যদি নিজস্ব জায়গা হয় তাহলে ইউটিলিটি বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ
- কোম্পানির সার্টিফিকেট অব ইন-করপোরেশন
- কোম্পানির মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন
- ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ৩ কপি ছবি
- ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্র
ট্রেড লাইসেন্স করার খরচ কত টাকা?
নতুন ব্যবসার স্বপ্ন বুকে নিয়ে যখন পথে নামেন, তখন মনে আসে অজস্র প্রশ্ন। এর মধ্যে অন্যতম হল ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়। যেমন, ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে, লাইসেন্সের জন্য কত খরচ হবে ইত্যাদি।
তো ট্রেড লাইসেন্সের খরচ নির্ভর করে ব্যবসার ধরণের উপর। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে, এটি ১ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে একক নামে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে খরচ আরও বাড়বে। আর কোম্পানির ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্স দিয়ে স্বল্প খরচে করা যাবে।
ট্রেড লাইসেন্স আবেদন ও সময়
ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জমা দিতে হবে। উক্ত আবেদন পত্রের সাথে সাধারণত ব্যবসার ধরণ, ব্যবসায়িক স্থানের ভাড়ার চালান, ট্যাক্স রসিদ, পরিচয়পত্রের ফটোকপি ইত্যাদি জমা দিতে হয়।
আর ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত, আবেদন জমা দেওয়ার ৫ থেকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ইস্যু করা হয়। তবে, আবেদনপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অ-সম্পূর্ণ থাকলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে। তাই যখন আপনি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তখন অবশ্যই নির্ভুল ভাবে আবেদন ও সঠিক কাগজপত্র প্রদান করার চেষ্টা করবেন।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সময়
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আইনি স্বীকৃতি ও বৈধতা নিশ্চিত করতে ট্রেড লাইসেন্স অপরিহার্য। আর উক্ত লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করার বিষয়টি ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কারণ, প্রতিটি নতুন ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর। তাই লাইসেন্সের কার্যকারিতা বহাল রাখতে প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। আর নবায়ন না করলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইনি জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, সেক্ষেত্রে আপনার জরিমানা, এমনকি ব্যবসা বন্ধের ঝুঁকিও থাকবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে – সে বিষয়ে উপরের আলোচনায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। তবে এরপরও আপনার মনে ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে আরো অনেক অজানা প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই নিচে ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। যাতে করে আপনার ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকে।
ট্রেড লাইসেন্স কোথায় পাওয়া যায়?
আপনারা যারা নতুন উদ্যোক্তা বা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া বাংলাদেশে কোনো বৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আর এই ট্রেড লাইসেন্স ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন থেকে নিতে পারবেন।
অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করা যাবে?
বর্তমান সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে উঠেছে অনলাইন নির্ভর। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি করে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু ব্যবসা শুরু করার জন্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করা জরুরি, যার মধ্যে একটি হল ই-ট্রেড লাইসেন্স।
আগে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন সরকারের উদ্যোগে অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যার ফলে ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স।
উপসংহার
ব্যবসা শুরু করার পূর্বে ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে তা নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তো যারা মূলত নতুন ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের লেখাটি অনেক হেল্পফুল হবে। ধন্যবাদ, এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
